ছবিঃ ফাইল ছবি

সিলেটে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ফের তিনজনের অধিক যাত্রী পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে যাচ্ছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)। একই সঙ্গে অটোরিকশায় গ্রীল লাগানো বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। 


শনিবার (২৫ অক্টোবর) সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তরে সিএনজি চালিত থ্রি–হুইলার ও প্যাডেলচালিত রিকশার ভাড়া নির্ধারণ সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকরের তারিখ শীঘ্রই জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে এসএমপি। 


এতে করে ফের সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন নগরবাসী। কারণ এর আগে যতবারই অটোরিকশায় গ্রীল লাগানো ও তিনজন যাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ততোবারই ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ প্রশাসন। আর এই সুযোগে ভাড়া বেড়ে প্রায় দিগুণ। 


এই পরিস্থিতিতে সাধারণ যাত্রীদের প্রশ্ন-অটোরিকশাকে কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে পুলিশ প্রশাসন। নাকি শুধু ভাড়াই বাড়বে? 


কারণ সর্বশেষ সিলেট নগরীতে সিএনজি চালিত অবৈধ অটোরিকশা ঠেকাতে সাদা ও হলুদ রঙ করার সিদ্ধান্ত নেয় এসএমপি। মেট্রোপলিটন এলাকার রেজিস্ট্রেশন করা গাড়ির রঙ হলুদ ও জেলার রেজিস্ট্রেশনভূক্ত অটোরিকশায় সাদা রঙ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে কয়েকদিন পুলিশ অভিযান পরিচালনা করলেও এখন আর সেটিও কার্যকর নেই। যার কারণে এখন কোনো অটোরিকশাতে হলুদ আর সাদা রঙ চোখে পড়ে না। 


সাধারণ যাত্রী ও নগরবাসী বলছেন, পুলিশ প্রশাসনের গাছাড়া মনোভাবের কারণে কোনো সিদ্ধান্তই বাস্তবায়ন হয় না। এতে করে পরিবহন শ্রমিকরা মানুষকে জিম্মি করে বাড়িয়ে দেন ভাড়া। যার খেসারত সাধারণ মানুষকেই দিতে হয়। 


নগরীর হাউজিং এস্টেট এলাকার বাসিন্দা রুহুল আমীন বলেন, পুলিশ প্রশাসন যতবারই এ ধরণের উদ্যোগ নিয়েছে, ততোবারই ভাড়া বেড়েছে। আর সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করেছে পুলিশ। এরপর আর পুলিশের তৎপরতা থাকে না। কিন্তু সারাবছর বাড়তি ভাড়ার বোঝা আমাদেরই টানতে হয়। 


শামীমাবাদ এলাকার বাসিন্দা সাকিব আহমদ বলেন, এই সুযোগে যাতে অটোচালকদের দৌরাত্ম না বাড়ে  পুলিশ প্রশাসনকে এটি নিশ্চিত করতে হবে।  


এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক শাহ সাহেদা আখতার বলেন,  পরিবহনের ক্ষেত্রে কোনো সিদ্ধান্ত ভাড়া বেড়ে যায় এটা সঠিক। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত কার্যকরের পর তিন যাত্রীর কাছ থেকে যাতে পাঁচজনের ভাড়া আদায় করা না হয় সেটিও পুলিশের দেখা উচিত। 

তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষের কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর করে শুধু ঘোষণার মধ্যে রাখলে কোনোদিনও কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে না। এজন্য যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সেটি বাস্তবায়ন করাটা খুবই জরুরি।   


এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে শনিবার রাতে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠায় এসএমপি। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় সিলেট মহানগর এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও প্যাডেল রিকশার ভাড়া নির্ধারণের জন্য সর্বস্তরের শ্রেণী পেশার প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তিনজনের বেশি যাত্রী পরিবহন করা যাবে না, যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য উভয় পাশে গ্রিল লাগাতে হবে, সিএনজি ও প্যাডেল রিকশার যৌক্তিক ভাড়া নির্ধারণ করা হবে। এ সিদ্ধান্ত কার্যকরের সময় জানিয়ে দেওয়া হবে। 


বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়- কতিপয় ব্যাক্তি ও সংগঠন ইতোমধ্যে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন মর্মে সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। ঘোষিত সময়ের পূর্বে সিএনজি ভাড়া পূর্বের মতোই বহাল থাকবে। অতিরিক্ত ভাড়া নির্ধারণ না করতে সিএনজি মালিক ও চালকদের সবিনয়ে অনুরোধ করা হলো।


সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আবদুল কুদ্দুছ চৌধুরী বলেন, ‘নগরবাসীর স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভাড়ার বিষয়টি বাস্তবসম্মতভাবে নির্ধারণ করা হবে। এতে চালক ও যাত্রী দু’পক্ষেরই স্বার্থ রক্ষা পাবে। 


তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে সিএনজিচালিত অটোরিকশা  চলাচলে নানা অনিয়ম হচ্ছে। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি সিএনজিতে নিরাপত্তা গ্রিল লাগানো বাধ্যতামূলক করা হবে এবং সর্বোচ্চ তিনজন যাত্রী পরিবহন করা যাবে। আমরা চাই এই অনিয়মগুলো দূর করে নগরবাসীকে স্বস্তি দিতে।’ 

Single News Bottom

শেয়ার করুনঃ

দৈনন্দিন থেকে আরো পড়ুন

সিলেট