সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কার্যালয় যেন অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়া। দপ্তরের নথি পাচার, বিভিন্ন প্রকল্পে অবৈধ লেনদেন, উৎকোচ না দিলে বিল আটকে দেওয়া ও ঠিকাদারদের কাছ থেকে প্রতি প্রকল্পে আর্থিক লেনদেন সবই চলে এখানে। 

 

এসব সকল অপকর্মের মূল হোতা এলজিইডি অফিসের অফিস সহকারী মো. রিয়াজ মিয়া। প্রভাবশালী মহলের আশ্রয়ে দীর্ঘদিন একই অফিসে বহাল থাকা এবং এলজিইডির নানা প্রকল্পে অবৈধ লেনদেনের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

 

বছর দশেক আগে অফিস সহায়ক পদে চাকরিতে যোগ দেওয়া রিয়াজ এলাকায় এখন ‘কোটিপতি অফিস সহকারী’ হিসেবে পরিচিত।  

 

স্থানীয়দের অভিযোগ, সীমিত বেতনে চাকরি করে রিয়াজ মিয়া গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদ। তাঁর বিরুদ্ধে ঠিকাদারদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়া, দপ্তরের নথি পাচারেরও অভিযোগ রয়েছে। 

 

দপ্তর সূত্রে জানা যায়, মো. রিয়াজ মিয়া ছাতক উপজেলা এলজিইডি অফিসে ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে পদোন্নতি পান। এর আগে তিনি প্রায় আট বছর একই দপ্তরে অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। 

 

সরকারি বিধি অনুযায়ী, একই কর্মস্থলে টানা তিন বছর থাকার পর বদলি হওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু রিয়াজ প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহলের ছত্রছায়ায় সেই নিয়ম এড়িয়ে দীর্ঘদিন ধরে একই জায়গায় বহাল রয়েছেন।

 

স্থানীয়দের অভিযোগ, তিনি এলজিইডির কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের সঙ্গে মিলে এক ধরনের ‘দুর্নীতিবান্ধব সিন্ডিকেট’ তৈরি করেছেন। প্রকল্প অনুমোদন, বিল পাস, নথি প্রক্রিয়াকরণ প্রতিটি কাজই তার নিয়ন্ত্রণে। 

 

আরও গুরুতর অভিযোগ হলো-অফিসের গোপন নথিপত্র তিনি অর্থের বিনিময়ে নির্দিষ্ট ঠিকাদারদের সরবরাহ করেন। স্থানীয় ছাত্রলীগের ঘনিষ্ঠ এক প্রভাবশালী ঠিকাদারের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিষয়টিও এখন এলাকায় আলোচনায়।

 

ভুক্তভোগী ঠিকাদারদের অভিযোগ, প্রতিটি প্রকল্পের বিল পাস করাতে হলে রিয়াজ মিয়াকে দিতে হয় শতকরা দুই শতাংশ হারে ঘুষ। কেউ দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে বিল আটকে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ঠিকাদার বলেন, ‘রিয়াজ ভাইয়ের অনুমতি ছাড়া কোনো বিল পাস হয় না। বাধ্য হয়ে ঘুষ দিতে হয়, না দিলে কাজের টাকাই মেলে না।’

 

শুধু ঠিকাদার নয়, অফিসে বিভিন্ন কাজে আসা সাধারণ সেবা প্রত্যাশীরাও তাঁর দুর্ব্যবহার ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে অনেক ঠিকাদারই প্রকল্প থেকে সরে যাচ্ছেন।

 

অফিসের একাধিক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পদোন্নতির পর রিয়াজ মিয়ার আচরণে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আগে তিনি সবাইকে ‘স্যার’ বলতেন, এখন তিনিই নিজেকে অফিসের বড় কর্তা ভাবেন।

 

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মো. রিয়াজ মিয়া বলেন, ‘সব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি শুধু আমার দায়িত্ব পালন করছি। এখানে আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘১০ বছর ধরে এখানে কাজ করছি এর মধ্যে ৫ বছর অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক। আর ৫ বছর অফিস সহায়ক হিসেবে। এর আগে মুন্সিগঞ্জে ছিলাম।’

 

এ বিষয়ে ছাতক উপজেলা প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এটা আমার কোনো বিষয় না। কর্তৃপক্ষ তাকে এখানে রেখেছে। আমি কিছুদিন আগে এসেছি। সে অনেক দিন ধরে এখানে আছে বলে মানুষ মনে করে অফিসটি তার নিয়ন্ত্রণে। কর্তৃপক্ষ চাইলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারে।’

Single News Bottom

শেয়ার করুনঃ

অনিয়ম-দুর্নীতি থেকে আরো পড়ুন

ছাতক, এলজিইডি