মিনিস্টার বাড়ি ভাঙার কাজ বন্ধ রাখতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নির্দেশ
ইতিহাস-ঐতিহ্য
প্রকাশঃ ২৮ জুন ২০২৫
আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামীণ জীবনের এক অনন্য শিল্প—হাতের সেলাইয়ে তৈরি ঐতিহ্যবাহী কাঁথা। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এক সময় নারীরা সংসারের কাজের ফাঁকে সুঁই-সুতায় বুনতেন কল্পনার নকশা, জীবনের গল্প আর নিপুণ কারুকার্য।
এসব কাঁথা শুধু গৃহস্থালির প্রয়োজন মেটানোর উপকরণই ছিল না, ছিল একধরনের অর্থনৈতিক অবলম্বনও।
কাঁথা সেলাই ছিল দরিদ্র পরিবারগুলোর নারীদের জন্য বাড়তি আয়ের একটা বড় উৎস। পুরনো শাড়ি, লুঙ্গি বা ওড়না দিয়ে তৈরি এই কাঁথায় রঙ-বেরঙের সুতায় ফুটে উঠত ফুল, ফল, পাখি, গাছপালা কিংবা হৃদয়ের কথামালা।
একজন নারী কাঁথা সেলাই করে ১০ থেকে ১২ দিনে আয় করতে পারতেন ৬০০ থেকে ১,০০০ টাকা পর্যন্ত। এতে যেমন সংসারের ব্যয় মেটানো যেত, তেমনি সন্তানদের পড়াশোনার খরচ চালাতেও সহায়তা হতো।
তবে এখন আর সেই দৃশ্য চোখে পড়ে না। বাজার দখল করে নিয়েছে রঙিন রেডিমেড লেপ, কম্বল আর চাদর। ফলে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে কাঁথা সেলাইয়ের ঐতিহ্য।
জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের কাঁথাশিল্পী আমেনা বেগম ও রেখা বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, 'আগে হাতে নকশা করা এসব কাঁথার কদর থাকায় তাঁরা প্রতিনিয়ত কাঁথা সেলাই করতেন। কিন্তু এখন আধুনিকতাঁর ছোঁয়ায় এখন আর মানুষ এসব কাঁথা বানাতে চায় না। সংসারের ফাঁকে কাঁথা সেলাই করে তাঁরা যা পেতেন, তা দিয়ে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচ চলে যেত। এখন আর তা সম্ভব হয় না।'
স্থানীয় শিক্ষার্থী জান্নাতুন খাতুন জানান, ‘পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি এসব কাঁথা সেলাই করতেন। তবে এখন আর তেমন কাজ পাওয়া যায় না। তাছাড়া কাঁথা সেলাই করে আগে যেমন মজুরি পেতেন, এখন তার অর্ধেকও মেলে না।’
এ ব্যাপারে সামাজিক সংগঠন ‘ফেয়ার ফেইস জগন্নাথপুর’র স্থায়ী কমিটির সভাপতি শামীম আহমদ বলেন, ‘গ্রামীণ কাঁথা শুধু ঐতিহ্য নয়, এটি নারীর আত্মনির্ভরশীলতার প্রতীক। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রশিক্ষণ, ঋণ ও বিপণনের সুযোগ তৈরি করা হলে এই শিল্প আবারও নতুন প্রাণ ফিরে পেতে পারে।’
জগন্নাথপুর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা রাজ মনি সিংহ বলেন, 'আগে বিভিন্ন নকশায় গ্রামীণ কাঁথা তৈরি হতো। আমরা এখন এই শিল্পে জড়িতদের খুঁজে বের করে কাঁথা শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্ঠা করব।'
গ্রামীণ কাঁথা শিল্প, জগন্নাথপুর কাঁথা, নারী উদ্যোগ, ঐতিহ্যবাহী কাঁথা সেলাই, কাঁথা শিল্প সুনামগঞ্জ