ছবিঃ জাফলংয়ের পিয়াইন নদী থেকে নির্বিচারে পাথর উত্তোলনে হুমকিতে পরিবেশ। ফাইল ছবি।

সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে সরকার নির্ধারিত পাথর কোয়ারী বিলুপ্ত ঘোষণা করে স্থায়ীভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ৮ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ১৬ সরকারি কর্মকর্তাকে আইনী নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।

গতকাল রবিবার (২৩ মার্চ) বেলার আইনজীবী এস. হাসানুল বান্না সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে তাদের 'নোটিশ অব ডিমান্ড ফর জাস্টিস' পাঠান।

নোটিশে সিলেটের পিয়াইন ও ডাউকি নদীসহ রাংপানি নদী, ধলাই নদী, বিছানাকান্দি, উৎমাছড়া, লোভাছড়া, শ্রীপুর, ভোলাগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের চলতি নদীতে বিদ্যমান পাথর কোয়ারি বিলুপ্ত ঘোষণাপূর্বক স্থায়ীভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হয়।

একইসাথে ২০২০ সালে সরকারি নির্দেশে পাথর উত্তোলন বন্ধ করে জারি করা গেজেট বাতিল করে গত ১৩ জানুয়ারি পাথর কোয়ারি ইজারা প্রদানের সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল করার দাবি জানানো হয়।

এছাড়াও বিগত সময়ে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন পাথর কোয়ারিতে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে নিহত ও আহত শ্রমিকদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করে তাদের পরিবারকে ক্ষতিপুরণ প্রদানের দাবি জানানো হয় আইনী নোটিশে।

নোটিশটি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, ভূমি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে পাঠানো হয়েছে।

এছাড়াও নোটিশে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, সিলেট ও সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারদেরও নোটিশে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

নোটিশে আগামী ৭ দিনের মধ্যে নেওয়া ব্যবস্থা সম্পর্কে বেলাকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে এবং একইসঙ্গে এর অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়, সিলেট ও সুনামগঞ্জের সকল পাথর কোয়ারি পর্যটনকেন্দ্রসমূহের মধ্যে আর নির্বিচারে যন্ত্রের সাহায্যে পাথর উত্তোলনের ফলে এসকল এলাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারিয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পরিবেশ, কৃষি, বন ও আবাসন। 

পরিবেশগত ক্ষতি ছাড়াও বিগত সময়ে ১০৯ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। পাথর পরিবাহী ট্রাকের কারণে ক্ষতি হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ব্রিজ ও কালভার্টসহ ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। শুধু ২০২০-২১ সালেই পাথরবাহী যানের কারণে সংগঠিত দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩২ জন মানুষ।

নোটিশে আরো উল্লেখ, ২০২০ সালের ৮ জুন সরকার পাথর উত্তোলনের বিরূপ প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে ৮টি পাথর কোয়ারির ইজারা স্থগিত করে এবং পাথর উত্তোলন বন্ধ ঘোষণা করে। ফলে সিলেটের পর্যটনকেন্দ্র আবার প্রাণ ফিরে পায় এবং বিগত কয়েক বছরে পর্যটক উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়, দেশের বিদ্যমান পাথর কোয়ারি থেকে দেশের চাহিদার মাত্র ৬.৬ শতাংশ পাথর উত্তোলন করা হয় এবং এবং ২০১৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ৬ বছরে সরকার এ খাত থেকে রাজস্ব পেয়েছে মাত্র ৩৮.৫০ কোটি টাকা। কিন্তু তার বিনিময়ে ধ্বংস হয়েছে নদীসমূহের পরিবেশ ও প্রতিবেশ, গুরুত্বপূর্ণ বনাঞ্চল, রাস্তা এবং অন্যান্য স্থাপনা।

কিন্তু এসকল বিষয় বিবেচনায় না নিয়ে, কোন ক্ষয়ক্ষতি ও প্রভাব নিরূপন না করে এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিবেচনায় না নিয়ে সরকার গত ১৩ জানুয়ারি এক আদেশে ২০২০ সালে পাথর কোয়ারি বন্ধে ঘোষিত প্রজ্ঞাপন বাতিল করে। আর এ নির্দেশের প্রভাবে এ অঞ্চলে আবারও অবৈধ পাথর উত্তোলন হচ্ছে এবং গত তিন মাসে ২ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে নোটিশে উল্লেখ।

Single News Bottom

শেয়ার করুনঃ

প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ থেকে আরো পড়ুন

সিলেট, পরিবেশ, পাথর উত্তোলন