সিলেটে তাপমাত্রা সামান্য কমবে, থাকতে পারে হালকা বৃষ্টি
প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ
সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, “সংরক্ষিত বনে কোনোভাবেই মেলা আয়োজনের সুযোগ নেই। প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রকাশঃ ৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১১:৪০ অপরাহ্ন
সিলেট নগরের সংরক্ষিত টিলাগড় ইকোপার্কে অনুমোদন ছাড়াই বৈশাখী মেলার আয়োজন চলছে। এ আয়োজনে জড়িত রয়েছেন সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতা, যিনি নিজের নামে নয়, অন্য একজনের নামে বন বিভাগের কাছ থেকে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রটি ইজারা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানায়, ইকোপার্কটি একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল, যেখানে মেলা আয়োজন সম্পূর্ণ অবৈধ। তবু প্রবেশমুখে বাঁশের খুঁটি গেড়ে দোকান নির্মাণ এবং সামাজিক মাধ্যমে স্টল বরাদ্দের প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
বন বিভাগের সাথে কথা বলে জানা যায়, ‘জালাল এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে গত ২৮ মার্চ এক বছরের জন্য ৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় ইজারা চুক্তি হয়। তবে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, এই ইজারার পেছনে আছেন সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সাইদুল এনাম চৌধুরী, যিনি ‘লাহিন চৌধুরী’ নামে ফেসবুকে পরিচিত। তিনি নিজের আইডি থেকে মেলার স্টল বরাদ্দ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনও দিয়েছেন।
যোগাযোগ করলে সাইদুল এনাম দাবি করেন, দলীয় পরিচয় ব্যবহার না করে এবং নিজের কাগজপত্র না থাকায় অন্য একজনের সঙ্গে যৌথভাবে তিনি ইজারা নিয়েছেন। তিনি বলেন, “বৈশাখী মেলা নয়, দর্শনার্থীদের জন্য খাবারের দোকান বসানোর পরিকল্পনা ছিল। কর্তৃপক্ষ বাধা দিলে তা আর করব না।”
বন বিভাগ জানিয়েছে, টিলাগড় ইকোপার্কের ১১২ একর জায়গাজুড়ে সীমানাপ্রাচীর আছে এবং এর ভেতরে মেলা আয়োজনের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি।
সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, “সংরক্ষিত বনে কোনোভাবেই মেলা আয়োজনের সুযোগ নেই। প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মো. শাহজালাল মেলা আয়োজনের বিষয়টি জানতেন না দাবি করেন এবং খবর পেয়ে লোক পাঠিয়ে দোকান খোলার কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান।
তিনি দাবি করেন, সাইদুল এনাম চৌধুরীকে তিনি চিনেন না এবং রাজনৈতিক কোনো সংশ্লিষ্টতা তাঁর নেই। তিনি ও মঈনুল নামের একজন বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রটি ইজারা নিয়েছেন। কিন্তু মঈনুলের সঙ্গে অন্য কেউ আছেন কি না, সেটি তিনি জানেন না।
প্রায় তিন বছর ধরে সিলেট বন বিভাগের টিলাগড় বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রটি ব্যবস্থাপনার জন্য ইজারা নিয়ে পরিচালনা করছিলেন যুবলীগ নেতা সুবেদুর রহমান মুন্না। তখন রাজনৈতিক দাপট খাটিয়ে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র ও ক্যাফেটেরিয়া ইজারা নিয়েছিলেন। ইজারা নিয়ে শুধু নিজেদের ব্যবসার দিকটিই নজর রেখেছিলেন। তার লোকজন সংরক্ষণ কেন্দ্রে রক্ষিত প্রাণীদের তদারকির গুরুত্ব দেয়নি। গত ৫ আগস্ট সরকারের পটপরিবর্তনের পর থেকেই আত্মগোপনে চলে যান তিনি।
টিলাগড় ইকোপার্ককে কেন্দ্র করে বেনামে আবারও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ইজারা গ্রহণ ও অনুমোদনবিহীন কর্মকাণ্ড স্থানীয় পর্যায়ে বন ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ও স্বচ্ছতার ঘাটতি বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ ও প্রাণী অধিকারভিত্তিক সংগঠন ‘ভূমিসন্তান বাংলাদেশ’-এর সমন্বয়ক মোহাম্মদ আশরাফুল কবির।
টিলাগড় ইকোপার্ক, বৈশাখী মেলা, স্বেচ্ছাসেবক দল, অবৈধ, অনিয়ম, বনবিভাগ