ছবিঃ তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর উপর নির্মাণাধীন মৈত্রী সেতু

সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পের বিকাশসহ একটি জেলা ও দুই উপজেলার সাথে সংযোগ স্থাপনের একমাত্র সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। ৩০ মাস মেয়াদের এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের মে মাসে। মেয়াদ শেষে এক এক করে ৭ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু একটি সেতুর স্বপ্ন পূরণ হয়নি এক উপজেলার মানুষের।

বলছিলাম সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর উপর নির্মিত শাহ্ আরেফিন ও অদৈত্ব মহাপ্রভু মৈত্রী সেতুর কথা। নির্মাণকাজ  শেষ হলে এটিই হবে হাওরের জেলা সুনামগঞ্জের সবচেয়ে বড় সেতু। সেই সাথে সুনামগঞ্জের যোগাযোগ ব্যবস্থা, পর্যটন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের আমূল পরিবর্তন ঘটাবে এই মৈত্রী সেতু।

অথচ সেই সেতুটি নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদোত্তীর্ণের ৭ বছর পর এসে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ শেষ হতে বছরখানেক সময় লাগবে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি, করোনা মহামারী ও দফায় দফায় বন্যার কারনে সেতুটির নির্মাণ কাজ ব্যহত হয়েছে। তাছাড়া সেতু নির্মাণকাজে প্রয়োজনীয় সামগ্রীর যোগান সময়মতো না পাওয়া নির্মাণকাজ বিলম্বের অন্যতম আরেকটি কারণ।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সেতুটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে। এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। ৭৫০ মিটার দৈর্ঘ্য এ সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৮৬ কোটি টাকা। আর সেতু নির্মাণের কাজটি করছে তমা কনস্ট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

স্থানীয় বাসিন্দারা সেতুটির ধীরগতির নির্মাণকাজে খুবই হতাশ। তাঁদের অভিযোগ, দফায় দফায় সময় বাড়ানো হয়েছে ঠিকই। কিন্তু কাজে অগ্রগতি হয়েছে খুবই কম। এর পেছনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির গাফলতিকেই দায়ী করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা বলছেন, এক বছর এক বছর করে ৭ বছর কেটে গেছে। তবুও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ‘বছর’ শেষ হবে না। সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত উদ্যোগ না নিলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি থামবে না। আর এই উপজেলাবাসীর স্বপ্নও পূরণ হবে না।     

সেতু সংলগ্ন গড়কাটি, লামাশ্রম ও বিন্নাকুলী গ্রামের বাসিন্দারা জানান, সেতুটি চালু হলে তাহিরপুর উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। অন্যদিকে তাহিরপুর সীমান্ত হয়ে বৃহত্তর নেত্রকোনা জেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। স্থানীয়রা পার্শ্ববর্তী বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা হয়ে খুব সহজেই জেলা সদরে দ্রুত যাতায়াত করতে পারবে। একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তাহিরপুরের সৌন্দর্য দেখতে ছুটে আসা পর্যটকদের ভোগান্তিও কমে আসবে। এতে করে তাহিরপুর উপজেলার পর্যটন শিল্পের ব্যপক প্রসার ঘটবে।

সেতু সংলগ্ন এলাকা বিন্নাকুলী গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, বন্যা আর করোনা দেখিয়ে সেতুটির কাজটি অনেক পেছানো হয়েছে। পরবর্তীতে যে গতিতে কাজ হওয়ার কথা তা আর হয়নি। গত দুই-তিন বছর ধরে শোনা যাচ্ছেে এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে। কিন্তু সেই একবছর আর শেষ হয় না।

বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন সিলেট ভয়েসকে বলেন, সেতুটির কাজ শেষ হলে এলাকার চিত্র অনেকাংশে পাল্টে যাবে। তখন আর খেয়াঘাটে মূল্যবান সময় নষ্ট করে নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না এ অঞ্চলের মানুষের। সহজ হয়ে আসবে পরিবহন ব্যবস্থা। সঙ্গে পর্যটন স্পটকে কেন্দ্র করে উদ্যোক্তা তৈরির পথ সুগম হবে।

সরেজমিনে সেতুটি দেখতে গিয়ে কথা হয় প্রকল্প পরিচালক মিয়া মোহাম্মদ নাসিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, সেতুর ৭৫টি গার্ডারের মধ্যে ৫৭টি গার্ডার বসানোর কাজ শেষ। বাকি রয়েছে ১৮টি গার্ডার। আর পিলার সংখ্যা ১৫টি। যার কাজও প্রায় শেষ করা হয়েছে। সবমিলিয়ে সেতুর ৮০-৮৫ ভাগ কাজ শেষের দিকে। ২০২৬ সালের এপ্রিল-মে মাসের মধ্যে সেতুর কাজ পুরোপুরি শেষ করা যাবে বলে দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে তাহিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) জাহিদুর রহমান সিলেট ভয়েসকে বলেন, প্রকল্পের  মেয়াদ তো অনেক আগেই পার হয়ে গেছে। এখন কাজটি যত দ্রুত সম্ভব শেষ করা যায় এ নিয়ে প্রতিনিয়ত ঠিকাদারকে বলা হচ্ছে। তারা ২০২৬ সালের মার্চ-এপ্রিলের দিকে কাজটি শেষ করবে বলে জানিয়েছে।

Single News Bottom

শেয়ার করুনঃ

অনুসন্ধান থেকে আরো পড়ুন

তাহিরপুর মৈত্রী সেতু, শাহ আরেফিন সেতু, যাদুকাটা নদী সেতু, সুনামগঞ্জ সেতু নির্মাণ, এলজিইডি সেতু প্রকল্প, তাহিরপুর পর্যটন, সুনামগঞ্জ যোগাযোগ উন্নয়ন, তমা কনস্ট্রাকশন, মৈত্রী সেতু বিলম্ব, সেতু নির্মাণ গাফিলতি